স্ক্যানিং মেশিন হলো এক প্রকার আধুনিক এক্স-রে মেশিন। মানুষের চিকিৎসায় যেমন এক্স-রে মেশিন, সিটি স্ক্যানার মেশিন দিয়ে এক্স-রে করিয়া শরীরের ভেতরের বিভিন্ন অংশের ইমেজ বা ছবি দেখা যায়। তেমনি লাগেজ স্ক্যানিং মেশিন, কন্টেইনার স্ক্যানিং মেশিন দিয়ে উক্ত লাগেজ ও কন্টেইনারের মধ্যে কি পন্য আছে তা সনাক্ত করা হয়।
বাংলাদেশ কাস্টমসে ১৯৯০ দশকের শুরুর দিকে শুধুমাত্র ঢাকা বিমান বন্দরে সীমিত আকারে যাত্রী ব্যাগেজ স্ক্যানিং করে খালাসের মাধ্যমে এদেশে স্ক্যানিং মেশিনের ব্যবহার শুরু হয়। পরবর্তীকালে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিমান বন্দরে এ স্ক্যানিং মেশিনের ব্যবহার শুরু হয়।
বর্তমানে বাংলাদেশ কাস্টমস এর অধিক্ষেত্র সমুদ্র বন্দর, বিমান বন্দর, স্থল শুল্ক ষ্টেশনে স্ক্যানিং মেশিন রয়েছে যা ডিপার্টমেন্টের কাস্টমস কর্মকর্তাগণ অপারেট করেন, ইমেজ এনালাইসিস করে চোরাচালান বা শুল্ক ফাকিরোধে কার্যকর ভুমিকা রাখেন।,ঢাকা চট্টগ্রাম, সিলেট, বেনাপোল স্থল বন্দরে যাত্রী ব্যাগেজ পরীক্ষার পাশাপাশি, কাস্টম হাউস, চট্টগ্রাম এর অধিক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে ২ টি ফিক্সড কন্টেইনার স্ক্যানিং ও একটি মোবাইল কন্টেইনার স্ক্যানিং মেশিনের মাধ্যমে চালান খালাস চালু আছে। মংলা বন্দরে অনুরূপ মোবাইল কন্টেইনার স্ক্যানিং মেশিন আছে যা আমি মংলা বন্দর ভ্রমণের সময় দেখেছি।
বিমান বন্দরে ব্যাগেজ/লাগেজ স্ক্যানিং মেশিন :
বিমান বন্দর সমুহে Heavy Duty luggage scanning machine বসানো আছে।একজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা এটি অপারেট করে থাকেন। যাত্রী কর্তৃক আনীত লাগেজ, এ মেশিনের টানেলের মধ্যে দিয়ে প্রবেশ করানো হয়। অতপর যাত্রীর আনীত লাগেজ স্ক্যানিং করে অপঘোষিত পন্য, চোরাচালানী পন্য, কমার্শিয়াল পন্য নেই তা নিশ্চিত হয়ে দ্রুত যাত্রীর লাগেজ খালাস দেয়া হয়।
কন্টেইনার স্ক্যানিং :- চট্টগ্রাম বন্দরের ৫ নং গেইট ও New mooring Gate এ স্ক্যানিং মেশিন স্থাপন করা আছে, এর মেশিনের নির্মাতা NUTECH China, এ ফিক্সড মেশিনের অনতি দূরে একটি কন্টেইনারের মধ্যে ইমেজ কন্ট্রোল রুম, এই রুমের মধ্যে স্ক্যানিং মেশিন অপারেটরগন বসেন। একি সাথে একজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেন। কোন কন্টেইনার স্ক্যানিং করতে হলে প্রথমে কন্টেইনার সমেত ট্রেইলার স্ক্যানিং মেশিনের অবকাঠামোর মধ্য দিয়ে আস্তে আস্তে চালিয়ে যায়। তখন অবকাঠামোর সাথে ফিক্সড করা X- Ray head থেকে রঞ্জন রশ্মি বিচ্ছুরণ হয়ে কন্টেইনার ভেদ করে যায়। তখন কন্টেইনারের মধ্যে কি পন্য আছে তার ইমেজ সার্ভারে রেকর্ড হয়ে যায়। অতঃপর দায়িত্বরত সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা তখন কন্টেইনার এর ইমেজ বড় ছোট করে দেখেন, কন্টেইনারের মধ্যে কি পন্য আছে তা নিশ্চিত হন। ঘোষণার সাথে মিল পেয়ে পন্য সমেত কন্টেইনার খালাসের অনুমতি দেন।
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সাধারণত Off Dock/ বেসরকারি ICD তে "০" শুন্য শুল্ক ও ৫% শুল্কের যে ৩৭ টি পন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড খালাসের অনুমতি দিয়েছে সেই পন্য গুলো কন্টেইনারসহ স্ক্যানিং করে অফ ডক বা বেসরকারি ICD এর উদ্দেশ্যে খালাস নেয়া হয়। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইমেজ দেখে আই,জি,এম ঘোষণার সাথে মিল পেলে রিপোর্ট আউট পাস স্বাক্ষর করে কন্টেইনার বাহিরে নেয়ার অনুমতি দেন। তবে দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা কোন ইমেজ সন্দেহ হলে রিপোর্ট Suspected লিখে স্বাক্ষর করে দেন, ফলে এই কন্টেইনার আর তাৎক্ষণিক খালাস নিতে পারেন না। পর মুহূর্তে আমদানিকারকের প্রতিনিধি, কাস্টম হাউস, গোয়েন্দার উপস্থিতিতে কন্টেইনার খুলে পন্য ১০০% পরীক্ষা করা হয়।
অপর দিকে চট্টগ্রাম বন্দরের Mega পোর্ট গেট দিয়ে রপ্তানিকৃত পন্য চালান কাভার ভ্যানে বা ট্রেইলরে নিয়ে রপ্তানির উদ্দেশ্যে জাহাজীকরনের জন্য প্রবেশ করার সময় উক্ত চালানে মাত্রারিক্ত রেডিয়েশন থাকলে তা প্রথমে স্ক্যানিং ও সিগন্যালিং এর মাধ্যমে সনাক্ত করা হয়।
এদেশে ব্যবহৃত হয় এমন স্ক্যানিং মেশিন :-
(1) Rapscan scanning (UK)
(2) Nutech scanning (China)
(3) Heimann scanning (Germany)
(4) Dianavision scanning (USA)
স্ক্যানিং করে পন্য খালাসের উপকারিতা কি?
(১) যাত্রীর ব্যাগেজ আধুনিক পদ্ধতিতে দ্রুত খালাস দেয়া;
(২) Trade Facilitate করা;
(৩) দ্রুত পন্য খালাস দেয়া;
(৪) বন্দরে কন্টেইনার জট কমানো ;
(৫) অর্থনীতির চাকা সচল রাখা;
(৬) আমদানী নিষিদ্ধ পন্য আটক করা ;
(৭) রেডিয়েশন যুক্ত পন্য আটকে সহায়তা করা;
(৮) ব্যাগেজে বা অন্যভাবে অসত্য ঘোষিত পন্য আটক করা;
স্ক্যানিং মেশিনের অপকারিতা:
(১) Scanning ডিউটি যেকোনো ক্ষেত্রেই একটি ঝুঁকিপূর্ণ ডিউট, কারন স্ক্যানিং মেশিন থেকে সব সময় ক্ষতিকর গামা-রে, এক্স-রে বাহির হয় যা ক্যান্সারসহ অন্যান্য কঠিন রোগ ছড়ায়। তবুও আমরা রাষ্ট্রের প্রয়োজনে এ ডিউটি করে যাচ্ছি। তবে একনাগাড় এ দায়িত্ব যথেষ্ট ক্ষতিকর। আপনি দেখবেন অসুস্থতাজনিত শরীর X-Ray করার সময় টেকনিশিয়ান সুরক্ষা ড্রেস পরে নিরাপদ দুরত্ব থেকে কাজটি করে থাকেন।
(২) স্ক্যানিং মেশিন অপারেটর যদি দক্ষ না হন তাহলে অনেক সময় অপঘোষিত পন্য ফাক গলিয়ে বেরিয়ে যেতে পারে।
বিঃদ্রঃ স্ক্যানিং মেশিনের হেডিং ৯০.২২ মনে রাখবেন সবাই।
Comments
Post a Comment