ক্রয় সূত্রে বা উত্তরাধিকার সূত্রে অথবা অন্য যেকোন সূত্রে জমির নতুন মালিকানা নির্ধারিত হলে নতুন মালিকের নামে ভূমি অফিসে নতুন লেজার বা খতিয়ান খুলতে হয়। যার মাধ্যমে একজন নতুন মালিকের পরিচিতিসহ ভুমি উন্নয়ন কর বা খাজনা প্রদান করার নম্বর যুক্ত হয়। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পুরাতন মালিকের নাম পরিবর্তন হয়ে নতুন মালিকের নাম লিখিত হয় এবং মূল খতিয়ান থেকে জমির কিছু অংশ নিয়ে নতুন জোত বা খতিয়ান সৃষ্টি হয়। যা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মিউটেশন বা নামজারী না হলে সরকারি খাতায় মালিকানার পরিবর্তন হয় না; সরকারি হিসাবে জমির প্রকৃত মালিক পূর্বের মালিকই থাকে। বিধায় জমির মালিকানার স্বপক্ষ্যে আপনার যত বড়/পোক্ত দলিল থাকুক না কেন মিউটেশন বা নামজারি করতেই হবে। অন্যথায়, আপনার আজকের অবহেলা আগামী দিনের কান্না হতে পারে।
বন্ধু জানতে চেয়েছে-
“আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া কেমন আছেন?আমার দাদারা আজ থেকে ৪০বছর আগে জমি বেচাকেনা করছিল কাগজের মাধ্যমে কিন্তু রেজিস্ট্রি করতে পারেনি দুজন ই মারা যাওয়ার কারনে।এখন ঐ দাদা অর্থাৎ (জমি বিক্রেতা) ছেলেরা রেজিস্ট্রি দিতে চাচ্ছে না,।উল্লেখ্য যে উক্ত কাগজে ক্রেতা বিক্রেতার স্বাক্ষর আছে এবং এলাকার ৩জন গন্য মান্য ব্যক্তির স্বাক্ষর আছে এবং সাক্ষীগন সবাই জীবিত আছে। এখন আমরা কি করলে রেজিস্ট্রি নিতে পারব একটু আইনগত পরামর্শ দিলে খুব উপকার হবে ভাইয়া।”
পরামর্শ:
আপনার দেয়া তথ্য মতে উক্ত জমি রেজিস্ট্রি করার সুযোগ নাই। তবে আপনি যদি উক্ত জমিতে দখলে থাকেন তবে নিম্নোক্ত আইন মোতাবেক প্রতিকার পেতে পারেন।
১৯০৮ সালের তামাদি আইনের ২৯ ধারানুযায়ী যদি কোন ব্যক্তি কৃষি বা অকৃষি জমি শান্তিপূর্ণ, বাঁধাহীন ও নিরবচ্ছিন্নভাবে দীর্ঘ ১২ বছর ধরে ভোগদখলরত অবস্থায় থাকে তবে তিনি ঐ জমির মালিকানা দাবী করতে পারবে এবং ঐ জমি থেকে তিনি বেদখলের হাত থেকে মুক্তি পেতে পারেন। এছাড়াও যদি কোন ব্যক্তি কোন সরকারি বা খাস জমি উক্তরূপ পদ্ধতিতে দীর্ঘ ৬০ বছর দখলে রাখে তবেও তিনি ঐ জমির মালিকানাসহ বেদখলের হাত থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন।
এছাড়াও যদি কোন জমিতে দখলে থাকা অবস্থায় কেউ বেদখলের হুমকি প্রদান করে বা বেদখল করে তবে দখল পুণরুদ্ধারের জন্য ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৫ ধারা মোতাবেক নিকটস্থ থানায় বা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করে ভোগদখলে থাকতে পারবেন।
এছাড়াও সুনির্দিষ্ট প্রতিকার-১৮৭৭ আইনের ৯ ধারা ও ৪২ ধারা মোতাবেক ঘোষনামূলক মামলা দায়ের করে দখল পুনরুদ্ধারের প্রতিকার পেতে পারেন। যাতে আপনি দখলে আছেন কিনা তাই প্রমাণ করতে হবে।
এছাড়াও আপনি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে সালিশি করে উক্ত বিষয়ে প্রতিকার পেতে পারেন। তদুপরি, একজন বিজ্ঞ দেওয়ানী আইনজীবীর পরামর্শ নিলে উক্ত বিষয়ে সহায়ক প্রতিকার লাভ করতে পারেন।
মিউটেশন বা নামজারী করার প্রচলিত পদ্ধতি দেওয়া হল;
সেবা প্রদান পদ্ধতি (সময় সাপেক্ষ);
সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের ল্যান্ড ট্রান্সফার (LT) নোটিশ অথবা আবেদনকারী হতে আবেদনপ্রাপ্তির পর সংশ্লিষ্ট রেজিস্টারে এন্ট্রি দিয়ে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে প্রেরণ করা হয়। ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সরজমিন তদন্ত ও রেকর্ডপত্র যাচাই অন্তে প্রস্তাব/প্রতিবেদন উপজেলা ভূমি অফিসে প্রেরণ করেন। অতঃপর সহকারী কমিশনার (ভূমি) শুনানির তারিখ ধার্য করে আবেদনকারী/রেকর্ডীয় মালিক এবং স্বার্থসংশ্লিষ্টদের নোটিশ প্রদান করেন। ধার্য তারিখে শুনানি ও কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নামজারি মঞ্জুর/না মঞ্জুর করা হয়। আবেদন মঞ্জুর হলে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা কর্তৃক প্রস্তুতকৃত ০৫ কপি খতিয়ানে স্বাক্ষর অন্তে আবেদনকারীকে ১কপি, মূল নথিতে ১ কপি সংরক্ষণসহ ১ কপি জেলা রেকর্ড রুম, ১ কপি মূল নথিতে সংরক্ষণ এবং ১ কপি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে প্রেরণ করা হয়।
সেবা প্রাপ্তি সময়;
সর্বোচ্চ ৪৫ দিন; মহানগরীর জন্য ৬০ কার্যদিবস
প্রয়োজনীয় ফি;
১. আবেদন ফি (কোর্ট ফি)- ২০ টাকা ২. নোটিশ জারি ফি- ৫০ টাকা ৩. রেকর্ড সংশোধন ফি- ১০০০ টাকা ৪. খতিয়ান ফি- ১০০ টাকা (সর্বমোট ১১৭০/- টাকা)
সেবা প্রাপ্তির স্থান;
উপজেলা ভূমি অফিস
দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা/কর্মচারী;
সহঃ কমিশনার (ভূমি), নামজারি সহকারী
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র;
১. সর্বশেষ নামজারি ও জমাভাগ/জমা একত্রিকরণের খতিয়ান (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ২. সংশ্লিষ্ট সর্বশেষ খতিয়ানের ফটোকপি/সার্টিফাইড কপি ৩. ওয়ারিশ সনদপত্র (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) (অনধিক ০৩ মাসের মধ্যে ইস্যুকৃত) ৪. মূল দলিলের ফটোকপি/সার্টিফাইড কপি ৫. সর্বশেষ জরিপের পর থেকে বায়া/পিট দলিল ৬. ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের দাখিলা ৭. আদালতের রায়/আদেশ/ডিক্রির সার্টিফাইড কপি ৮. আদালতের রায়/আদেশ/ডিক্রি থাকলে আরজির সার্টিফাইড কপি ৯. জমির চৌহদ্দিসহ কলমি নক্সা
সেবা প্রাপ্তির শর্তাবলি;
আবেদন করতে হবে জমির মালিকানার কাগজ ও দখল থাকতে হবে।
সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি;
১.এসএ অ্যান্ড টি অ্যাক্ট, ১৯৫০
২.ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল, ১৯৯০
৩.ভূমি মন্ত্রণালয়ের ০৫/০৪/২০১০ তারিখের ভূঃমঃ/শা -৯/(বিবিধ)/১৩/০৯-৩৮৫ নং পরিপত্র
৪.ভূমি মন্ত্রণালয়ের ৩০ জুন ২০১৫ তারিখের ৩১.০০.০০০০.০৪২.০৪.০১৯.০৮-৫৯৮ নং পরিপত্র
সেবা প্রদানে ব্যর্থ হলে প্রতিকারকারী কর্মকর্তা;
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)
বর্তমানে জমি মিউটেশন বা নামজারী করার পদ্ধতি অনলাইনে করা হয়েছে । লিংক- https://land.gov.bd/pages/mutation
Comments
Post a Comment