ফেসবুক গুগল ইউটিউব হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদির মাধ্যম ব্যবহার করে প্রদত্ত মেসেজ, ভয়েস, বিজ্ঞাপন এর বিপরীতে ভ্যাট অাদায়ের বিধান কি?
উত্তর - তথ্য প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষতার এই যুগে পৃথিবীর যে কোনো স্থান হতে যে কোনো সেবা/অনলাইন সেবা প্রদান করা যায়। বর্তমান পৃথিবীকে বিশ্ব পল্লী (Global Village) বলা হয়। সেবা প্রদান করার জন্য সেবা প্রদানকারীকে বাংলাদেশের মধ্যে অবস্থান করার প্রয়োজন হয় না। যিনি ভ্যাট প্রদান করবেন তিনি অাবাসিক হতে পারেন অাবার অনাবাসিক হতে পারেন। মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক অাইন, ২০২০ এর ধারা-২ এর দফা-(১) এবং (১৫) এর মাধ্যমে যথাক্রমে 'অনাবাসিক ব্যক্তি' এবং 'অাবাসিক ব্যক্তি' এই দুটি সংজ্ঞা সন্নিবেশ করা হয়েছে। বহুজাতিক কোম্পানি/বিদেশি মালিকানাধীন কোন প্রতিষ্ঠান বা তাদের কোন শাখা যদি বাংলাদেশে অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করেন কিন্তু মালিক বাংলাদেশে অবস্থান না করেন তাহলে তাকে 'অনাবাসিক ব্যক্তি' হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা যাবে।
গুগল, ফেসবুকসহ বিভিন্ন অনাবাসী প্রতিষ্ঠান তাদের পেজে বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করে থাকে, বিভিন্ন সেবা বিক্রি করে। পুরো ব্যবসাটি অনলাইন ভিত্তিক। এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো কার্যালয় বাংলাদেশে নেই। তারা মূলত অনলাইনের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন নেয়, প্রচার করে। সেক্ষেত্রে এই ধরনের ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের নিকট হতে ভ্যাট অাদায় করার প্রয়োজন হবে।
অাইনের ধারা-১৯ অনুসারে কোনো অনাবাসিক ব্যক্তি বাংলাদেশের কোনো নির্দিষ্ট স্থান হতে অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা না করলে অর্থাৎ বাংলাদেশের বাইরের কোনো স্থান হতে অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করলে বা বাংলাদেশের বাইরের কোনো স্থান হতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সেবা প্রদান করলে তাকে মূসক এজেন্ট নিয়োগ দিতে হবে। যারা অনাবাসিক ব্যক্তি তারা সাধারণত বিদেশে অবস্থান করেন। তাদের পক্ষে ভ্যাট সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম (যেমন- ভ্যাট রেজিষ্ট্রেশন নেয়া, ভ্যাট চালান ইস্যু করা, হিসাবপত্র সংরক্ষণ করা, দাখিলপত্র দাখিল করা ইত্যাদি) মূসক এজেন্ট সম্পাদন করবেন। উল্লেখ্য, ভ্যাট রেজিষ্ট্রেশন অনাবাসিক ব্যক্তির নামে নিতে হবে। অনাবাসিক ব্যক্তির সকল দায়দায়িত্ব উক্ত এজেন্ট পালন ও সম্পাদন করবেন এবং অারোপিত কর, জরিমানা, দন্ড ও সুদসহ যাবতীয় অর্থ পরিশোধের জন্য তিনি অনাবাসিক ব্যক্তির সহিত যৌথ ও পৃথকভাবে দায়বদ্ধ থাকবেন।
অনাবাসিক ব্যক্তি কর্তৃক বাংলাদেশে প্রদত্ত বেতার, টেলিভিশন ও ইলেকট্রনিক সেবা (যেমন- ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব, ভাইবার, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদির মাধ্যম ব্যবহার করে প্রদত্ত মেসেজ, ভয়েস, বিজ্ঞাপন ও অনুরূপ যে কোন সেবা) সরবরাহকারী সকল প্রতিষ্ঠানকে মুসক এজেন্ট নিয়োগ পূর্বক মূসক এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক প্রদান করতে হবে।
উৎস মূল্য সংযোজন কর কর্তন ও অাদায় বিধিমালা,২০২০ (এস.অার.ও নং-১৪৯-অাইন/২০২০/১১০-মূসক, তারিখ-১১/০৬/২০২০) এর বিধি -৩(৩) অনুসারে অনিবন্ধিত ব্যক্তি কর্তৃক বাংলাদেশের বাহিরে অবস্থিত অনাবাসিক ব্যক্তির নিকট হতে গৃহীত সেবার সেবামূল্য পরিশোধের সময় সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ১৫% হারে উৎসে মূসক অাদায় করবে।
মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক অাইন, ২০১২ ভঙ্গের দায়ে ফেসবুক এর বাংলাদেশী এজেন্টের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে ইতোমধ্যে নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর হতে মামলা দায়ের করা হয়েছে ।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে ফেসবুক তিন মাসের রিটার্ন জমা দিয়েছে; সাথে ২০,০০০ টাকা জরিমানা; বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে বিক্রিত বিজ্ঞাপন থেকে কর্তনকৃত ভ্যাট ৭৭ লক্ষ টাকাও জমা দিয়েছে
এই দেশের বিজ্ঞাপন নিতে হলে অনলাইন সকল প্লাটফর্ম (ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব, জুম, নেটফ্লিক্স, Tiktok)কে স্থানীয় আইন মেনে ব্যবসা করতে হবে।
Comments
Post a Comment